Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
সোনাদিয়া সমুদ্র সৈকত
স্থান
মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নে অবস্থিত।
কিভাবে যাওয়া যায়
কক্সবাজার সদর হতে কস্তুরা ঘাট / ৬নং ঘাটা / উত্তর নুনিয়া ছড়া সরকারী জেটী ঘাট হতে স্প্রীট বোট বা কাটের বোটে করে সোনাদিয়া যাওয়া যায়।
বিস্তারিত

সোনাদিয়া

 

সোনাদিয়া কক্সবাজার জেলাধীন মহেশখালী উপজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ একটিদ্বীপ । দ্বীপটির আয়তন ৭ বর্গ কিলোমিটার। কক্সবাজার জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নে সোনাদিয়া অবস্থিত। এটি ২১˙২৮˝-২১˙৩৩˝উত্তর অক্ষাংশ ও ৯১˙৫০˝-৯১˙৫৬˝পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। একটি খাল দ্বারা সোনাদিয়া মহেশখালী মূল দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন। 

 

প্রায় ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রশস্থ সৈকত, সৈকত ঘেষে সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে থাকা সূউচ্চ বালিয়াড়ি, জালের  মতো ছোট-বড় অসংখ্য খাল বেষ্টিত ম্যানগ্রোভ বন, বিস্তির্ণ ল্যাগুন্যাল ম্যাডফ্ল্যাট, কেয়া-নিশিন্দার ঝোপ, বিচিত্র প্রজাতির জলচর পাখি সোনাদিয়া দ্বীপের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সমুদ্র সৈকতের পাশ ঘেষে অবস্থিত সোনাদিয়ার সূ-উচ্চু বালিয়াড়ির তুলনা বাংলাদেশে  নেই। সমুদ্র এবং সৈকত থেকে বালিয়াড়ির দৃশ্য অপূর্ব মনে হয়।  সোনাদিয়ার সৈকত এবং বালিয়াড়ি বিপন্ন জলপাই বর্ণের সামুদ্রিক কাছিমের ডিম পাড়ার উপযোগী স্থান। এখানে সামুদ্রিক সবুজ কাছিমও ডিম পাড়তে আসে। সমুদ্র সৈকতের বেলাভূমিতে পানির কিনারা ঘেষে বিচরন করে লাল কাঁকড়া এবং প্যারাবন এলাকায় শীলা কাঁকড়া পাওয়া যায়।   

 

 

স্থানীয় অধিবাসীদের মতে সোনাদিয়া দ্বীপে মানব বসতির ইতিহাস আনুমানিক দেড়শত বছরের। দ্বীপের মানুষেরা মূলত দুইটি গ্রামে বসবাস করে: সোনাদিয়া পূর্বপাড়া এবং সোনাদিয়া পশ্চিমপাড়া। দ্বীপটির বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় এক হাজার সাত শত। মাছ ধরা, মাছ শুকানো এবং কৃষিকাজ এই দ্বীপবাসীর মূল পেশা। অনেকেই আবার তাদের জীবিকার জন্য চিংড়ির পোনা ও শামুক-ঝিনুক সংগ্রহের মতো পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর কাজে নিয়োজিত থাকতে দেখা যায়।

 

বাংলাদেশের দক্ষিন-পূর্ব উপকূলীয় প্যারাবনের অবশিষ্টাংশ এখন মূলত শুধু সোনাদিয়া দ্বীপেই দেখা যায়। সোনাদিয়ার প্যারাবন বাইন বৃক্ষ সমৃদ্ধ। এছাড়া প্যারাবনে  কেওড়া, গেওয়া, হারগোজা, নুনিয়া ইত্যাদি ম্যনগ্রোভ প্রজাতির উদ্ভিদ পাওয়া যায়। প্যারাবনের ভিতরে সুন্দর বনের মত ছোট ছোট  নদীর দু’পাশে নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা যায়। সোনাদিয়ার প্যারাবন, চর, খাল ও মোহনা নানা প্রজাতির মাছ ও অমেরুদন্ডী প্রাণীর গুরুত্বপূর্ন আবাসস্থল। দ্বীপটির প্যারাবন সংলগ্ন খালে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় যেমন-বাটা, কোরাল, তাইল্যা, দাতিনা, কাউন, পোয়া ইত্যাদি।

 

 

শীতকালে সোনাদিয়া দ্বীপে নানা ধরনের স্থানীয় ও পরিযায়ী জলচর পাখির আগমন ঘটে। চর, ল্যাগুন এবং খালের ধারে জলচর পাখির বেশী সমাগম ঘটে। এখানে ৭০ প্রজাতির জলচর পাখি পাওয়া যায়। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত সময়ে সোনাদিয়ায় জলচর পাখি বিশেষত দেশী-বিদেশী কাদাখোচা পাখির মেলা বসে। লিটল প্রেটিংকল (Little Pratincle)সারা বছর ঝাকে ঝাকে সোনাদিয়ায় বিচরন করে এবং বালুময় জায়গায় প্রজনন করে। অতি সম্প্রতি সোনাদিয়ায় বৈশ্বিকভাবে বিপন্ন ৩ প্রজাতির কাদাখোচা যথা স্পুনবিল্ড স্যান্ডপাইপার (Spoonbilled Sandpiper), এশিয়ান ডোউইচার (Asian Dowitcher) এবং নর্ডম্যান্স গ্রীনশ্যাংক (Nordmans Green Shank) দেখা গিয়েছে। বুনো হাঁসের মধ্যে রাজহাঁস (Barheaded Goose), চকাচকি (Ruddy Shelduck) এবং খন্তেমুখা (Shoveller) অন্যতম।     

 

সোনাদিয়া দ্বীপকে পরিবেশ বিপর্যয় থেকে রক্ষার লক্ষ্যে সরকার বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর ৪ নং ধারার বিধান অনুসারে  ১৯৯৯ সালে সোনাদিয়া দ্বীপ ও পার্শ্ববর্তী ঘটিভাংগা মৌজার আংশিক এলাকা নিয়ে ইকোলজিকেলি ক্রিটিক্যাল এরিয়া বা ইসিএ ঘোষনা করে। ইসিএ ঘোষনার পর সোনাদিয়ায় পরিবেশের লক্ষনীয় উন্নতি হয়েছে।