Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
বড় রাখাইন পাড়া বৌদ্ধ মন্দির
স্থান
মহেশখালী পৌরসভা, গোরকঘাটা বাজার সংলগ্ন, মহেশখালী, কক্সবাজার।
কিভাবে যাওয়া যায়
সড়ক পথে- ঢাকা ঢাকা-চট্রগ্রাম-কক্সবাজার হতে আরাকান মহাসড়ক পথে সরাসরি চকরিয়া থানা রাস্তার মাথা হয়ে বদরখালী ব্রীজ পার হয়ে কালারমা ছড়া অথবা শাপলাপুর রাস্তা দিয়ে সরাসরি মহেশখালী উপজেলা প্রশাসকের কার্যালয়/উপজেলা পরিষদ । কক্সবাজার সদর হতে কস্তুরা ঘাট / ৬নং ঘাটা / উত্তর নুনিয়া ছড়া সরকারী জেটী ঘাট হতে স্প্রীট বোট বা কাটের বোটে করে মহেশখালী জেটিঘাটা/আদিনাথ জেটিঘাট সেখান থেকে রিক্স/ মটর গাড়ী যোগে উক্ত দর্শনীয় স্থান সমূহে যাওয়া যায়। জলপথে ঢাকা-চট্রগ্রাম-খুলনা-নারায়নগঞ্জ- চাদপুর-কক্সবাজার হতে জলপথে নৌকা,ইঞ্জিন বোট ও ট্রলারের মাধ্যমে মহেশখালী জেটিঘাট/আদিনাথ জেটিঘাট সেখান থেকে রিক্সা/ মটর গাড়ী যোগে উক্ত দর্শনীয় স্থান সমূহে যাওয়া যায়। বিঃদ্রঃ-রেল পথে মহেশখালী উপজেলা পরিষদ এর সাথে কোন যোগাযোগ নাই।
বিস্তারিত

মহেশখালীতে অনেক দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম শতাব্দীর পুরানো ঐতিহাসিক বৌদ্ধ মন্দির। রাখাইন সম্প্রদায়ের বৌদ্ধ মন্দির দেখার জন্য মহেশখালীতে প্রতিনিয়ত পর্যটকদের সমাগম ঘটে।মূল মন্দির আনুমানিক প্রায় ২৮৩ বৎসর পূর্বে নির্মিত হয়। পর্যায়ক্রমে প্রয়োজন অনুসারে মন্দিরের সংস্কার এবং মেরামত কাজ করা হয়। সর্বশেষ গত ২০০৪ সালে ডিসেম্বর মাসের ০৭ তারিখে বর্তমান মন্দিরটি পূনঃনির্মাণ করা হয়।বড় পিতলের মুর্তিটি ১০১ বৎসর পূর্বে এটি বাংলাদেশের মধ্যে ২য় বৃহত্তম বৌদ্ধমুর্তি, দায়ক স্বর্গীয় উ থৈংঅংক্য এবং দায়িকা স্বর্গীয় দো নেং ওয়ে স্থাপন করেন। সীমা মন্দিরের দাড়ানো মুর্তি সম্পূর্ণ একটি গাছকে খোদাই করে বানানো, বিরল এই মুর্তিটি আনুমানিক প্রায় ১১২ বৎসর পূর্বে স্থাপন করা হয়। গাছের খোদাই করা আর কোন বৌদ্ধমুর্তি বাংলাদেশে নেই।এ মন্দিরের দায়ক স্বর্গীয় কো হলা রি দায়িকা স্বর্গীয় দো নিংমা। এ ছাড়াও এখানে রয়েছে ন্যাশনাল পিছ প্যাগোডা, কো না ওয়াং প্যাকোডা (রাশি চক্রের প্যাকোডা)। মুং জা লিংদা ধর্মীয় পুকুর-গৌতম বুদ্ধ বৌদ্ধত্ব লাভের পর ০৭ টি পূণ্য স্থানে ০৭ দিন করে ধ্যানেরত ছিলেন। তিনি ৬ষ্ঠ সপ্তাহ অতিবাহিতকালে এই মুং জা লিংদা পুকুরে ধ্যানমগ্ন থাকাকালীন প্রবল ঝড় বৃষ্টি হয়। এই সময় গৌতম বুদ্ধের দেহটিকে ঝড় বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য নাগরাজ নিজ দেহকে আশ্রম তৈরী করে গৌতম বুদ্ধের মস্তকের উপর ফণা আকৃতি করে এক সপ্তাহ ব্যাপি অবস্থান করেছিলেন। এ থেকে গৌতম বুদ্ধের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রতি বছর রাখাইনরা মুং জা লিংদা পুকুরে বর্ষাব্রত পালন করে থাকেন।

 

২০১১ সালের আদম শুমারীর হিসাব অনুযায়ী মহেশখালীতে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ৭৫০০ (সাত হাজার পাঁচশত) জন এবং ৫টি বৌদ্ধ মন্দির। রাখাইন আবাসিক এলাকা গুলো যথা মহেশখালী পৌরসভা, শাপলাপুর ও ছোট মহেশখালীর ঠাকুরতলায় রাখাইন ধর্মাবলম্বীরা যুগ যুগ ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস ও ধর্ম পালন করে আছে। তাদের মধ্যে নারী-পুরুষ উভয়ই কর্মঠ। ছেলে মেয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিনিয়ত পরিবারের ভরণ পোষনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। মূলত তারা স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও মহাজনী কারবারী। তাছাড়া টেইলার্স, ছোট ছোট মুদির দোকান, তাঁতের কাপড় তৈরি এবং কিছু লোক জেলের কাজ করেন। তারা বেশির ভাগ স্বচ্ছল। মহেশখালীর রাখাইন নারী পুরুষ ধর্মের প্রতিও সচেতন। পার্বনের সময় বিভিন্ন দোকান-পাঠ বন্ধ করে ধর্মীয় আচারে মন দেয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় উৎসব হলো বৌদ্ধ পূর্ণিমা-তার আচরিত দিক হলো যেদিন পুজা আরম্ভ হবে সেদিন তারা বিভিন্ন পুজা ঘরে গিয়ে সুগন্ধি পরিবেশন করে এবং গোলাপ জল দিয়ে ছোট বড় বৌদ্ধমূর্তি স্নান করায়। ছোট বড় রাখাইন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সকলে বৌদ্ধ মূর্তির সামনে দু’হাত জোড় করে প্রার্থনায় রত হয়। কারণ সেদিন গৌতমবুদ্ধের জন্ম দিন, নির্বাণ লাভের দিন ও সমাধির দিন। তাদের আর একটি বড় উৎসব হলো ফানুস বাতি উড্ডয়নের দিন, এই পুজার অর্থ হলো দেশের মধ্যে কোন ঝড়-তুফান, খরা, আপদ-বালাই দুর করার উদ্দেশ্যে নারী পুরুষ মিলে ফানুস বাতি উড্ডয়ন করে। এ সময়ে হাজার হাজার রাখাইন তরুন-তরুনী নতুন রুপে সাজে লে-লে মাইও মাইও (হেপি পুরে হেপি পুরে) শ্লোগানে শ্লোগানে বিভিন্ন দলে দলে সব রাখাইন এলাকা মুখরিত করে। পুজাটি হয় অক্টোবর-নভেম্বর এর দিকে। তাদের ফানুস বাতি গুলো যদি সঠিক ভাবে উড্ডয়ন হয় তাহলে তাদের মন খুব ভাল হয়ে যায়। পুজার সময় তাদের বাড়ীতে বাড়ীতে অতিথি আপ্যায়ন হয়। রাখাইনদের আর একটি উৎসব রাখাইন ভাষায় সাংগ্রাই বা নববর্ষের উৎসব। এই সাংগ্রাই উৎসব (এপ্রিল মাসের ১৩-১৪) জলকেলি অনুষ্টিত হয়। জলকেলি অনুষ্ঠানটি তাদের অন্যরকম খেলা। ১৪ হতে ২০ বছরের তরুণ-তরুণী নিজেদের মধ্যে জল নিক্ষেপের মাধ্যমে হৃদয় বিনিময় হয়। তরুণ তরুণীরা বিভিন্ন ঢংয়ে পোষাক পরিধান করে নাচ গানে মেতে উঠে। তরুণীরা ও বিভিন্ন রকমের ফুলের লাল থামি আঁল্পনা আঁকা ফতুয়া পরিধান করে হাতে পানির পাত্র নিয়ে ছেলেদের পানি নিক্ষেপ করে। এই তিন দিনের অনুষ্ঠানে উভয় লিঙ্গের মধ্যে অন্য রকম ভাবের সৃষ্টি হয়। তাদের বৈচিত্র্যময় ও মধুময় গান যেমন- তেঘ্রাংশে (লোকগীতি)। এছাড়াও অসংখ্য সংগীত রয়েছে।

 

রাখাইনরা নিজের মাতৃ ভাষায় কথা বলে। ভাষা সংস্কৃতি ও সত্ত্বার দিক থেকে তারা বাংলাদেশের অন্যান্য সম্প্রদায় থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এবং তাদের সাংস্কৃতিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-১) আমোদ-প্রমোদ, ২) রাখাইন জেপোয়া (যাত্রা), ৩) রাখাইন এয়ইন পোয়া (জলসা), ৪) রাখাইন প্রানেই (নাটক), ৫) রাখাইন ছাখাং (গান), ৬) রাখাইন আকাহ্ (নৃত্য)। এদিকে রাখাইন এয়ইন পোয়ে (জলসা) জলসা অনুষ্ঠান একমাত্র বৌদ্ধ ভিক্ষুর শবদাহ ও অন্তোষ্টিক্রিয়া উপলক্ষে আয়োজন করা হয়। আকাহ্, সিমিং, ব্রজ্য আকাহ্, নেহ আকাহ্, তায় পাং আকা ইত্যাদি অনুষ্ঠান গুলো মহেশখালীর সকল শ্রেণীর রাখাইনরা ঐতিহাসিক বড় রাখাইন পাড়ার শতাব্দীর পুরানো মন্দির মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। রাখাইন তরুণীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভিন্ন পোশাক ও সোনার গয়না থামি হাফ ফতুয়া পড়ে অনুষ্ঠান উদযাপন করে থাকে। 

 

রাখাইন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানসমূহঃ

** রাখাইন নববর্ষ (জলকেলী উৎসব):

এপ্রিল মাসের ১৩ অথবা ১৪ তারিখে ০৪ (চার) দিন ব্যাপি ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরবর্তীতে ০৩ (তিন) দিন ব্যাপি জলকেলী উৎসব।

** বৌদ্ধ পূর্ণিমা:

মে মাসে অনুষ্ঠান হয় (চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল)

** আষাঢ়ী পূর্ণিমা:

জুলাই মাসে অনুষ্ঠান হয় (চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল)

** প্রবারনা পূর্ণিমা:

অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত হয় (চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল)

ফানুশ বাতি উড়ানো অনুষ্ঠান এবং জাহাজ ভাসানো অনুষ্ঠান

** কার্তিক পূর্ণিমা:

নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হয় (চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল)

পুরো কার্তিক মাস ব্যাপি “কঠিন চিরব দান” উৎসব অনুষ্ঠান